*মাধবপুরে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি: অন্ধকারে আউলিয়াবাদ রাম কেশব উচ্চ বিদ্যালয়*

- Update Time : ০১:১৩:২৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৪ মে ২০২৫
- / ৮৬ Time View

*মাধবপুরে প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি: অন্ধকারে আউলিয়াবাদ রাম কেশব উচ্চ বিদ্যালয়*
স্টাফ রিপোর্টার: হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার আউলিয়াবাদ রাম কেশব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে উঠেছে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। বিদ্যালয়ের সম্পদ আত্মসাৎ থেকে শুরু করে শিক্ষক নিয়োগে স্বজনপ্রীতি এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অবৈধ অর্থ আদায়ের মতো গুরুতর অভিযোগের পাহাড় জমেছে এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের আইপিএস (ইনভার্টার পাওয়ার সাপ্লাই) দিনের পর দিন ব্যবহৃত হচ্ছে প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আসাদুজ্জামানের ব্যক্তিগত বাসায়। অথচ এই আইপিএস বিদ্যালয়ের জরুরি বৈদ্যুতিক চাহিদা মেটানোর জন্য স্থাপন করা হয়েছিল।
শুধু তাই নয়, শিক্ষকদের প্রতি স্বজনপ্রীতির অভিযোগও উঠেছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুযায়ী, বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষিকা শম্পা দেব রায়কে প্রায় প্রতিদিনই দুপুরের খাবারের পর ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শম্পা দেব রায় প্রথমে সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ পেলেও প্রধান শিক্ষক সৈয়দ মোঃ আসাদুজ্জামান প্রভাব খাটিয়ে তাকে ইংরেজি শিক্ষিকা হিসেবে পদায়ন করেন। এর ফলে বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
দুর্নীতির আরও ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের ঘটনায়। চলতি বছর ২০২৫ সালের এসএসসি সাধারণ শাখা ও কারিগরি শাখার ফরম পূরণ বাবদ বোর্ডের নির্ধারিত ফির অতিরিক্ত জন প্রতি ৫০০ টাকা করে আদায় করেছেন প্রধান শিক্ষক। এখানেই শেষ নয়, ২০২১ সাল থেকে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সনদ ও প্রত্যয়নপত্র প্রদানের নামেও জন প্রতি ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদ্যালয়ের সাধারণ হিসাবে জমা না করে প্রধান শিক্ষক নিজেই আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যালয় পরিচালনার ক্ষেত্রেও শিক্ষা নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন করেছেন প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আসাদুজ্জামান। শিক্ষা নীতিমালায় বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য পাঁচটি উপকমিটি গঠনের কথা উল্লেখ থাকলেও, তিনি আজ পর্যন্ত সেই একটি কমিটি ও গঠন করেননি। এর ফলে বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সম্পূর্ণরূপে অনুপস্থিত।
এছাড়াও, বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার ল্যাব সহকারি মোঃ নয়ন মিয়ার মাধ্যমে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে দেদারসে কোচিং বাণিজ্য চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষকের প্রত্যক্ষ মদদেই এই অবৈধ কোচিং বাণিজ্য চলছে।
প্রধান শিক্ষকের এই লাগামছাড়া দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে আউলিয়াবাদ রাম কেশব উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে। অভিভাবক ও স্থানীয় সচেতন মহল অবিলম্বে এই দুর্নীতির তদন্ত এবং অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধবপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের কোনো কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জানান এই বিষয়ে কেউ কোন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে তদন্ত সাপেক্ষ অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।